চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহারের ফলে আপনার চুলের আদ্রতার ঘাটতি পূরণ করবে। কারি পাতা বিটা ক্যারোটিন এবংং প্রোটিন সমৃদ্ধ উৎস, যা চুলের ফলিককে শক্তিশালী করে এবং স্বাস্থ্যকর চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটি চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বজায় রাখার মাধ্যমে চুলের অকাল পাকা হওয়া কমায়। 

প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ কারি পাতা যেমন চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে, তেমনি খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। এই পাতার প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি মেলে ফলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। জেনে নিন, স্বাস্থ্যজ্জ্বল ঘন ও ঝলমলে চুলের জন্য কিভাবে ব্যবহার করবেন কারি পাতা। 

পেজ সূচিপত্র: চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার 

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

আজকাল অনেকে চুল পড়া ,চুল লম্বা না হওয়া, চুলের পুষ্টি কমে যাওয়া ও অকালপক্ক তাই ভুগতেছেন। চুলকে লম্বা ও স্বাস্থ্যকর করে বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় এবং প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো কারি পাতা ব্যবহার। কারি পাতা ব্যবহারের ফলে চুল লম্বা ঘন এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। আপনার চুলের  অপর্যাপ্ত পুষ্টি থাকলে তা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে এবং ভাঙতে শুরু করতে পারে।

 চুল ঘন স্বাস্থ্যবান লম্বা করতে কারি পাতা ব্যবহার খুবই কার্যকারী । কারি পাতায় ভিটামিন বি, প্রোটিন ও পুষ্টিগুনে ভরপুর এ পাতায় চুলের গোড়া শক্ত করে, চুল পড়া কমায় । ৫- ৬টি কারি পাতা নিন এর সাথে আমলকীয় মেথি গুঁড়ো মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন । তারপর চুলে লাগিয়ে ম্যাসেজ করুন। সপ্তাহে কমপক্ষে একবার হলেও এটি ব্যবহার করুন ।এতে চুল স্বাস্থ্যজ্জল ও ঝলমলে হবে। 

চুল গজানোর জন্য কারি পাতা মেথির ব্যবহার

চুল পড়া সমস্যা যেন শেষ হতে চাই না । ঘন কালো চুল পেতে কারি পাতা ও মেথির ব্যবহার অতুলনীয়। চুল গজানোর জন্য কারি পাতা ও মেথির ব্যবহার অনেক উপকারী। ঘন এবং জেল্লাদার চুলের স্বপ্নে পূরণ হবে আপনার শুধু নিয়মিত যত্ন নিতে হবে । আর এই   কথাগুলো নিশ্চিয় আপনার অজানা নয় । সুস্থতা পেতে যেমন শরীরের খেয়াল রাখতে হয় এমন ভাবে চুলে নানা সমস্যা মেটাতে চুলের যত্নের বিকল্প কিছু নাই। 
আরো পড়ুন
শুরুতে তেলের মধ্যে মেথির বীজ এবং কারি পাতা যোগ করে লবঙ্গ দিয়ে ফুটিয়ে ঠান্ডা হতে দিন । তারপর ১০ মিনিট ধরে চুলে ম্যাসেজ করুন । চুল শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন অথবা শ্যাম্পু করার আগে ৩০ মিনিট রেখে দিন। সেরা ফলাফলের জন্য সপ্তাহে ৩-৪ চার বার এটি ব্যবহার করুন। 

কারি পাতা ব্যবহারে চুল লম্বা করার উপায়

অনেক সময় চুল ঘন থাকার পরেও আগা ফাটার সমস্যা থেকেই যায়। ।তখন ঘন ঘন চুল কাটতে হয়। চুল লম্বা ও আগা ফাটা বন্ধ করার জন্য চুলের আগায় শুধু কারি পাতার বেটে লাগিয়ে রাখুন, দেখবেন  আস্তে আস্তে চুল লম্বা হবে ও আগা ফাটা কমে যাবে। এতে আপনার চুল ফাটা বন্ধ হবে। 

কারি পাতার সাথে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে পুরো চুলে মেখে  রাখলে তা আপনার চুল কালো করতে সাহায্য করবে। চুলের আগা ফাটা বন্ধ করতে ও চুল পড়া বন্ধ করতে এই উপায় অনেক কার্যকরি । শুধু কারি পাতাবেটে চুলে লাগালে ও পাবেন ঝলমলে চুল। এটিতে এন্টি অক্সিডেন্ট ও প্রোটিন থাকায় চুলকে দীপ্তিময় ও প্রাণবন্ত করে তোলে। 

নারিকেল তেল ও কারি পাতা ব্যবহার

এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে যার গুনে চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে ফেলা সম্ভব হয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো কারি পাতা ও নারিকেল তেলের ব্যবহার। এই পাতার গুণে মাথার ভর্তি কুচকুচে কালো চুল পাবেন আপনিও তাহলে আর অপেক্ষা কেন কিভাবে তেল ও কারি পাতা ব্যবহারে চুল কালো করা সম্ভব জেনে নিন

অনেক গরম করে নারিকেল তেল দিন এক মুঠো কারি পাতা ফেলে কম আছে কিছুক্ষণ গরম করুন তারপর নামিয়ে ঠান্ডা করে ছেকে নিন সপ্তাহে দুইদিন এইটেল ব্যবহার করুন চুলের সারারাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করে নিন। 
আরো পড়ুন

চুল সিল্কিতে কারি পাতা জবা ফুলের ব্যবহার

চুল সিল্কিতে কারি পাতা জবা ফুল ব্যবহার করতে পারেন ।এটি আপনার চুলের আদ্রতার ঘাটতি পূরণ করবে। এই প্রতিটি উপাদান চুলে যোগায় পুষ্টি এবং সেই সঙ্গে হেয়ার  ফলিকল থেকে মৃতকোষ সরিয়ে দেয়। 

প্রয়োজন মতো পানি মিশিয়ে আধা কাপ কারি পাতা কেটে নিন । মিশ্রণটি চুলে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। ৪০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন এতে মাথার ত্বক পরিষ্কার হবে চুলে ও আসবে সিল্কি ভাব। 

চুলের যত্নে কারি পাতার জল

চুলের যত্নে কারি পাতার জল অনেক উপকারী আপনার চুল যদি রুক্ষ শুষ্ক হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে কারি পাতার জল ব্যবহার করতে পারেন হয়তো আপনি ভাবছেন কারি পাতার জল আবার কিভাবে চুলে ব্যবহার করা যায় এই কারি পাতার জল আপনি কিভাবে তৈরি করবেন চলুন জেনে নেই

প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহার:

  • কারি পাতা জল তৈরি করার জন্য আপনি প্রথম একটি পরিষ্কার পাত্র নিন । 
  • পরিষ্কারপাত্রে এক কাপ পরিমাণ জলের সাথে এক মুঠোর টাটকা সতেজ কারি পাতার মিশিয়ে চুলায় হালকা আছে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। 
  • জল ফোটানো হয়ে গেলে সবশেষে এই জল একটি পরিষ্কার ছাকনি দিয়ে ছেকে নিন এবং একটি স্প্রে বোতলে ভরে সংরক্ষণ করুন। 
তৈরি হয়ে গেল কারি পাতার জল এবং আপনি আপনার ফ্রিজিং চুলে নিয়মিত এই জল স্প্রে করে ব্যবহার করুন। এতে করে আপনার চুলের রুক্ষভাবে অনেকটাই কমে যাবে। 

চুলের যত্নে কারি পাতার তৈরি চা

কারি পাতার চা এটি শুনে আপনি নিশ্চয় অবাক হয়েছেন। শুনতে অদ্ভুত লাগলো এই কারি পাতার চা আপনার চুলকে ভালো রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে । আপনার চুল কি ঝরে যাচ্ছে ?আপনি কি চুলের খুশকি সমস্যায় ভুগছেন ?আপনার চুলে কি খুব অল্প বয়সে পাক ধরেছে? আপনার কি চুল পড়ে মাথায় টাক পরতে শুরু করেছে । 
আরো পড়ুন
এক কথায় বলতে গেলে রুক্ষ শুষ্ক চুল কি আপনি ভীষণ চিন্তিত এবং আপনি কি জানেন আপনার চুলের এই সব সমস্যার সকল সমাধান লুকিয়ে রয়েছে কারি পাতার তৈরি চা।এখন হয়তো ভাবতেছেন কারি পাতার চা কিভাবে খেতে হয় চলুন নিচে জেনে নেওয়া যাক। 

আপনি কয়টি কারি পাতা জলে ফুটিয়ে নিন। তাতে সামান্য লেবুর রস এবং স্বাদমতো চিনি যোগ করে খুব সহজেই তৈরি করে ফেলুন কারি পাতার চা । এভাবে একটানা সাত থেকে আট দিন কারিপাতার চা খেতে থাকুন এতে আপনার চুলের সকল সমস্যা নিমিষেই গায়েব হয়ে যাবে। তাছাড়া নিয়মিত কারি পাতার চা খেলে আপনার হজম শক্তি ও বৃদ্ধি পেতে পারে এবং চুলের স্বাস্থ্য ও ঠিক রাখে। 

কারি পাতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা

কারি পাতা ব্যবহারে তেমন কোন অপকারিতার নেই বললেই চলে। তবুও প্রত্যেকটি জিনিসই ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। কারি পাতা ব্যবহার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সর্তকতা গুলো মেনে চলার চেষ্টা করবেন। 
  • যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তারা কারি পাতা এই পোস্ট ব্যবহারের  ফলে ত্বকে এলার্জির উদ্বেগ হতে পারে
  • তাই মাথার ত্বকে কারি পাতা লাগানোর পূর্বে খানিকটা আপনার ত্বকে লাগিয়ে পরীক্ষা করে নিন । তাতে এলার্জি কোন সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা
  • কারি পাতা তেল ব্যবহারের ফলে অনেক সময় জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হতে পারে । যাদের এই সমস্যা হবে তাদের কারি পাতা ব্যবহার না করাটাই ভালো। 
মনে রাখবেন এক এক মানুষের চুলের প্রকৃতি এক এক রকম হয়ে থাকে। কারিপাতা ব্যবহার করে কিভাবে আপনি চুল লম্বা করবেন তা অনেকগুলো উপায় রয়েছে সুতরাং আপনার চুলের চাহিদা অনুযায়ী আপনি কারি পাতা ব্যবহার করবেন, কি করবেন না সে সিদ্ধান্ত আপনার। 

হেয়ার টনিক হিসেবে কারি পাতা তেল

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার অনেকটাই হেয়ারটনিক হিসেবে কাজ করে থাকে। আপনি নারকেল তেলের সাথে বা অন্য কোন ওয়েলের সাথে মিশিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন এই হেয়ার টনিক। এ হেয়ার টনিক ব্যবহারের ফলে আপনার চুলের আর্দ্রতা যেমন দূর করে তেমনি আপনি আপনার চুলের গোড়া মজবুত শক্ত করে তুলতে পারবেন। 
  • একটি পাত্রে নারিকেলের তেল ঢালুন এবং এর সাথে কারি পাতা যোগ করুন। পাতার চারপাশ যতক্ষণ পর্যন্ত কালো বর্ণের হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোভাবে নাড়তে থাকুন । 
  • এরপর চারপাশ কালো হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করুন মিশ্রণটি কিছুক্ষণ সময়ের জন্য রেখে দিন ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত। ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনি শুধু তেলগুলো পাতা থেকে ছেড়ে নিন এবং আপনার মাথায় লাগান।  
  • আস্তে আস্তে ভালোভাবে ম্যাসেজ করুন । ম্যাসেজ শেষে এক ঘন্টা এই তেলটি আপনার মাথায় রাখুন । তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন ভালো ফলাফল পেতে  সপ্তাহে ২ -৩ তিনবার এভাবে এপ্লাই করুন। 

শেষ কথা: চুলে যত্নে কারি পাতার ব্যবহার

চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার অতুলনীয় ।অনেকেই আছেন যারা চুলে অনেক দামি হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন ,আবার অনেকেই চুলে যত্নে ভরসা করেন বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান । সে হিসেবে প্রাকৃতিক উপাদান এর মধ্যে প্রথমেই কারি পাতার নামটি জনপ্রিয়। কারি পাতার মধ্যে এমন সব উপাদান রয়েছে যা আপনার ত্বকের যত্ন নেয় ।যার কারণে আয়ুর্বেদিক পাতা হিসেবে এটি ব্যবহার হয়ে থাকে।

নিয়মিত নিয়মমাফিক কারি পাতা ব্যবহার করলে আপনি আপনার একাধিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন । তাই দেরি না করে ,আজ থেকে চুলের যত্নে আপনি শুরু করে দিন কারি পাতার ব্যবহার। উপরিউক্ত এই কৌশল গুলি অবলম্বন করে আপনি পেতে পারেন স্বাস্থ্যকর, ঝলমলে, সিল্কি এবং লম্বা চুল। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

রুমু ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url